News

Home/News
ডিজিটাল পাঠদানে অভ্যস্ত হচ্ছেন শিক্ষকেরা

October,24 2021 1 month ago 355


...

শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে শিক্ষকেরাই চালিকা শক্তি। শিক্ষকদের মানোন্নয়নে জোর দিতে হবে।

  • টিভিতে মাধ্যমিকে ক্লাস ১৬০৯টি এবং প্রাথমিকে ৬০৫টি।

  • মাধ্যমিকে তিন মাসে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ক্লাস ৪ লাখ ৫৪ হাজার।

  • প্রাথমিকে মোট শিক্ষক ৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৭১ জন। মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষক ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮২ জন।

ঢাকা কলেজের ‘অনলাইন ক্লাস স্টুডিও ও সার্ভার রুমে’ স্বচ্ছ কাচের বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে পড়াচ্ছিলেন একজন শিক্ষক। তবে তাঁর ঠিক সামনে কোনো শিক্ষার্থী নেই। সেখানে ক্যামেরা চালু করে আছেন একজন ক্যামেরাম্যান। তবে সশরীর শিক্ষার্থীরা না থাকলেও তারা অনলাইনে এ ক্লাসে যুক্ত হয়েছে।

গতকাল সোমবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে কলেজের দোতলায় স্থাপিত ওই স্টুডিওতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল। ক্লাসটি তখন কলেজের ফেসবুক পেজে লাইভ (সরাসরি) হচ্ছিল। পরে কথা হয় রসায়ন বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক বি এম মহীবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের রসায়ন দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস নিচ্ছিলেন। তাঁদের কলেজে করোনাকালে দেড় বছর ধরে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। তবে তিনি চার মাস ধরে এভাবে ক্লাস নিচ্ছেন। প্রথম দিকে দু-একটি ক্লাসে জড়তা থাকলেও এখন তা নেই।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি ১ লাখ ৩৩ হাজার ২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক ৭ লাখ ৪০ হাজার ৪৭১ জন এবং শিক্ষার্থী ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭ হাজার ৮৫২ জন। আর মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষার (প্রাথমিক পরবর্তী) ৩৬ হাজার ৫২৬টি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক আছেন ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৫৮২ জন এবং শিক্ষার্থী ১ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার ২৫১ জন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও এখনো সব শ্রেণির ক্লাস প্রতিদিন হচ্ছে না। দীর্ঘ এ ছুটির ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা।

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা সচল রাখতে গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস প্রচার শুরু হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, মাধ্যমিকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০৯টি ক্লাস টিভিতে রেকর্ড করে প্রচার করা হয়েছে। ওই বছরের এপ্রিল থেকে প্রাথমিকেও টিভির মাধ্যমে ক্লাস প্রচার শুরু হয়। গতকাল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, এ পর্যন্ত ৬০৫টি ক্লাস রেকর্ড করে টিভিতে সম্প্রচার করা হয়েছে।

শুধু ঢাকা কলেজের এই শিক্ষক নয়, করোনাকালে শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন ধারার এ পাঠদানে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন সারা দেশের প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষকেরা। অনেক শিক্ষক যেখানে ডিজিটাল মাধ্যমে পুরোপুরি অভ্যস্ত ছিলেন না, সেখানে অনেকেই এখন অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষাও নিচ্ছেন। ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইউটিউব, জুম, গুগল ক্লাসরুম ও গুগল মিটের মতো যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। শুধু নবীন নয়, প্রবীণ শিক্ষকেরাও এমন বিকল্প পাঠদানে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।

শিক্ষকেরা বলছেন, করোনাকালে বন্ধে শিক্ষার যে ক্ষতি হয়েছে, সেটি পূরণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর ক্লাসের পাশাপাশি অনলাইনসহ বিকল্প উপায়ের শিক্ষাদানও চালু রাখতে হবে। এটি ভালোভাবে করতে হলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।

এমন এক বাস্তবতায় শিক্ষার পুনরুদ্ধারে শিক্ষকেরাই প্রাণ—প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ ৫ অক্টোবর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।

মাউশির তদারক ও মূল্যায়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ২৬ হাজার ২৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শুধু তিন মাসেই মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে অনলাইনে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ক্লাস হয়েছে। এসব ক্লাস অনেক শিক্ষক বাসায় বসে করেছেন, অনেকেই আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েও করেছেন। এর বাইরেও শিক্ষকেরা অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছেন।

সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও অনলাইনে ক্লাস–পরীক্ষা নিয়েছেন। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও ফেসবুকের মাধ্যমে ক্লাস নিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সশরীর শিক্ষার পাশাপাশি অনলাইন শিক্ষাদান চালু রাখা উচিত। করোনাকালে অনলাইন শিক্ষাসহ বিকল্প উপায়ে শিক্ষাদানে শিক্ষকদের যে দক্ষতা তৈরি হয়েছে, সেটি যেন হারিয়ে না যায়। এখন কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

...
Lets Talk

I want to learn your thoughts how together we can build ICT driven Economy for a sustainable Bangladesh